গুম, নির্যাতন আর নির্বাসনের মাঝেও সরকারের প্রতিহিংসায় ১৭০ মামলা

সালাহউদ্দিন আহমেদকে বরণ করতে প্রস্তুত পেকুয়াবাসী

প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৪ ১০:০৬ , আপডেট: ১০ আগস্ট, ২০২৪ ১০:০৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মোঃ ফারুক, পেকুয়া:

প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬টি মামলার হাজিরা দিতে হতো। তার মানে এক মাসে ১৭০টি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হতো। তার মাঝে রিমান্ডের নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে। যখনি বিএনপির দলীয় মুখপাত্রের ভূমিকা রাখা শুরু করছিলেন তখনি গুম হয়ে যান। দুই মাস গুম রাখার পর একদিন মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেন। তখন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ অবস্থায় হেফাজতে নিয়েছে শিলং পুলিশ। পরবর্তীতে তাঁর নামে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর মামলায় ভারতে ৯ বছর অবস্থান শেষে খালাসপ্রাপ্ত হন। মামলায় খালাস হলেও সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে ফিরতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে আজ (রবিবার) দেশে আসার ঘোষণা দেন।

বলছিলাম পেকুয়ার কৃতি সন্তান, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের কথা।

এদিকে সালাউদ্দিন আহমেদ দেশে ফেরার ঘোষণায় কক্সবাজার জেলাসহ পেকুয়া উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝে দেখা দিয়ে আনন্দ। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্বাগতম জানিয়ে ব্যানার পোষ্টার ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা স্বাগত মিছিল শুরু করেছে।

রবিবার দুপুরে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশাল আনন্দ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়ার বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদ সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। চকরিয়া-পেকুয়ায় দুইবারের সাংসদ ছাড়াও স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সাংসদ নির্বাচিত হন। যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ন-মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে থাকাবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান।

আরো জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন। সাবেক আওয়ামীলীগ সরকার বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের ধৃত করা শুরু করলে অজ্ঞাতস্থান থেকে দলীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। তার ঠিক দুই মাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তাকে পাওয়া যায়। তখন ভারত সরকারের তরফে ঢাকাকে জানানো হয়, ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ অবস্থায় সালাউদ্দিনকে হেফাজতে নিয়েছে শিলং পুলিশ। পরবর্তীতে তার নামে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ মামলার শুনানী শেষে খালাস হলেও সাবেক সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে ফেরত আসতে পারেনি।

অবশেষে শনিবার (১০ আগস্ট) দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার দুপুর ২টার দিকে দিল্লি থেকে ঢাকায় আসবেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালাউদ্দিন আহমেদের এপিএস সাংবাদিক ছফওয়ানুল করিম।

রবিবার দুপুরে দেশে ফিরবেন সালাউদ্দিন আহমেদ। এই নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ জানান, পেকুয়ার সন্তান সালাউদ্দিন আহমেদ একজন জাতীয় নেতা। সরকারের রোষানলে পড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে খুব কষ্টে দিনাপাত করেছেন। বাংলাদেশে ও ভারতে থাকাবস্থায় ওনার নামে ১৭০টি মামলা রুজু করে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। আইনি প্রক্রিয়া শেষে প্রিয় নেতা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিল দেশে ফেরার জন্য। দেশের মানুষ ও মাটিকে খুব ভালবাসেন বলেই দেশে চলে আসতে সব সময় চেষ্টা করেন। অবশেষে সত্যের জয় হলো। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, রবিবার আমাদের সকলের প্রিয় নেতা আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আমরা বরণ করার জন্য প্রস্তুত।

উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুজিবুর হক চৌধুরী জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সফল যোগাযোগমন্ত্রী আমাদের পেকুয়ার সন্তান জনাব সালাউদ্দিন আহমদ দীর্ঘ ৯বছর ভারতে নির্বাসন দিন পার করছেন। অনেকবার চেষ্টা করেছেন দেশে ফেরার জন্য। কিন্তু আইনি জটিলতায় দেশে আসতে পারে নাই। নির্দোষ প্রমাণ হয়ে দেশে আসার অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন। এমন খবরে আমরা আনন্দিত। জনপ্রিয়তা কারে কয় নেতা আসলে বুঝতে পারবে।

পেকুয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, জাতীয়তাবাদী দলের প্রাণ আমাদের নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ। কক্সবাজারবাসীর সোনালী সন্তান সরকারের গুম আর খুনের রাজনীতিতে পড়ে গিয়েছিল। আজীবনের জন্য গুম করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণের দোয়ায় ভারতে রেখে আসে সরকারের এজেন্সি। দীর্ঘ ৮বছর আইনী লড়াই শেষে দেশে আসার জন্য অনাপত্তিপত্র পাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা অনেক খুশি। স্বরণকালের বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে নেতাকে বরণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত।

পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদুল ইসলাম জানান, আমরা প্রিয় নেতার জন্য অপেক্ষায় আছি কখন দেশে ফিরবে। সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এতদিন ভারতে নির্বাসিত জীবন পার করেছেন। মামলায় নির্দোষ প্রমাণ হয়ে দেশে ফেরার জন্য অনাপত্তিপত্র পাওয়ায় রবিবার দেশে ফিরে আসবেন। আমরা বরণ করার জন্য প্রস্তুত।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের এপিএস সাংবাদিক ছফওয়ানুল করিম জানান, ভারতে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে৷ ইনশাল্লাহ রবিবার দুপুরে বাংলাদেশে চলে আসবেন।